রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য হুমকি : ৫ হাজার জনের তালিকা প্রস্তুত
শিগগিরই দেশব্যাপি সাঁড়াশি অভিযানে নামছে পুলিশ
আপলোড সময় :
১২-১০-২০২৪ ০৯:৩৬:৫৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৩-১০-২০২৪ ১০:৩২:১১ অপরাহ্ন
শিগগিরই দেশব্যাপি সাঁড়াশি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। এরই মধ্যে অভিযান পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মন্ত্রণালয় ও জেলা-উপজেলাভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করে এই অভিযানের ছক পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে। বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ও অপরাধে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে আটক করা হবে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে ৫ হাজার জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে সরকারের একটি সংস্থা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলীয় বিবেচনায় এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি। অপরাধ বিবেচনা করেই তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। সরকারদলীয় নেতার পরিচয়ে ও জনপ্রতিনিধির হওয়ার প্রভাব খাটিয়ে অনেক আগে থেকে সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছেন অনেকে। ফলে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, ডাকাতি ও খুনের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় জড়িতরা অধিকাংশই সন্ত্রাসী ও মাদকব্যবসায়ী। এসব সন্ত্রাসীরা কাদের শেল্টারে চলে ও আস্তানায় ওঠাবসা করে সেটি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে শনিবার (১২ অক্টোবর) সাংবাদিকদের বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে সেগুলো ফ্যাক্টচেক করে দেখা গেছে, তার বিভিন্ন তথ্যই গুজব ছিল। যেখানেই গুজব ছড়ানো হবে তাদের বিরুদ্ধে তথ্য দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সারাদেশে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে। অপরাধ করলে কারও পার পাওয়ার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক পরিচয় দিলেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
পুলিশপ্রধান বলেন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, মাদক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাসহ সবগুলো নিয়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে। আমরা যে কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলাজনিত অবনতি ঘটনা প্রতিহত করতে চাই। মাঝে মাঝে জনসাধারণের মনে যে শঙ্কা তৈরি হয় এবং আমাদের কাছে যে অভিযোগ আসে, আমরা সেগুলোকে আমলে নিতে চাই। আমরা যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ঘটনাগুলো প্রতিহত করতে পারি।
চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ সব অপরাধের তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ জানিয়ে আইজিপি বলেন, আমি বলব কোনো সংবাদ যদি সেনসেটিভ মনে হয়; তবে সে বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান। সেটা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় জানছেন অথবা অন্যভাবে জানছেন, সেটা আমাদের জানান। আপনার পরিচয় গোপন করে জানান। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অথবা চাঁদাবাজি যেটাই হোক না কেন চুপ করে দেখেন আমরা ব্যবস্থা নেই কি না। আমরা আপনাদের পাশে আছি, সবার পাশে আছি। আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই।
জানা গেছে, রাষ্ট্র এবং সমাজের জন্য হুমকি- তালিকায় এমন ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে। তাদের দলীয় সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। গত ১৫ বছরে সাধারণ মানুষকে নির্যাতন, হয়রানি, দখল বাণিজ্য, অনিয়ম এবং সিন্ডিকেট করে রাষ্ট্রীয় অর্থ তছরুপ করে সমাজকে অস্থিতিশীল করা, কিশোর গ্যাং এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর লুটপাট, চাঁদাবাজি এবং দখল বাণিজ্যে সক্রিয় হওয়া ব্যক্তিদেরও এই তালিকায় নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত ৫ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এরপরই আত্মগোপনে চলে গেছেন সাবেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগপন্থি স্থানীয় জনপ্রতিনিরা। লম্বা সময় ধরে এলাকায় ত্রাস হিসাবে পরিচিত দলটির স্থানীয় নেতারাও প্রকাশ্যে নেই। বেগতিক অবস্থা টের পেয়ে সরকার পতনের আগে ও পরে দেশ ছাড়ার সুযোগও নিয়েছেন অনেকেই। তবে বিদায়ি সরকারের বেশিরভাগ মন্ত্রী-এমপি, সুবিধাভোগী আমলা ও ব্যবসায়ীরা দেশ ছাড়তে পারেননি। বাকিরা রয়েছেন আত্মগোপনে। মূলত পলাতকদের ধরতেই অভিযানের ছক চূড়ান্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যৌথবাহিনীর একটা অভিযান হতেই পারে। তবে এই অভিযানে দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে সবার কাছে মেসেজ পৌঁছায় অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না। তাহলে যৌথ অভিযান জনসমর্থন পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগের তুলনায় এবারকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। গণআন্দোলন, বিদ্রোহ, বিপ্লব যাই বলেন, এর মাধ্যমে সরকারের পতন হয়েছে। এখন যারা ক্ষমতায় বসেছেন তারা সবকিছু গুছিয়ে জেলাভিত্তিক নির্দেশনাগুলো দেবেন। পুলিশি অভিযান শুরু করতে দেরি হচ্ছে- এমনটা আমার মনে হয় না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত দু’মাসে বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় গুজব বেড়েছে। এর একটি অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, দীর্ঘসময় বাংলাদেশের মানুষ বাকস্বাধীনতা পায়নি এবং গণমাধ্যমগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। তখন সাধারণ মানুষ নিয়মিত গণমাধ্যমের ওপর আস্থা হারিয়েছে। এ দীর্ঘ সময়ে তথ্যের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে। সে কারণেই মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা দেখছে; সেটিকেই বিশ্বাস করতে চাইছে। যে অংশ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষে ছিল, তারা হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যারা দেশে অস্থিরতা চাচ্ছে, তারা গুজব ছড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানভীর হাসান জোহা বলেন, তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে যেমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে; তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজব রোধ করতে লাইভে এসে বললাম, তিনি আমার আত্মীয় নন। এভাবে গুজব রোধ করা কঠিন। এজন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) মাধ্যমে গুজব শনাক্ত এবং তা ছড়ানো বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে; তাদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ দুটি কাজ করা গেলে গুজব বন্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলা স্কুপ/বিশেষ প্রতিবেদক/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স